নিউজ ডেস্ক ::
সামনে বর্ষা যেকোন মুহূর্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্ষতি করে দিতে পারে ঘরবাড়ি। এমন পরিস্থীতিতে ছেলে মেয়ে স্ত্রী পরিজন নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। আহার কোথা থেকে জোগাড় করব এসব ভাবনা নিয়ে দিন যাচ্ছে। তবে এ মুহূর্তে ঈদুল ফিতর নিয়ে কোন চিন্তাভাবনা নেই।
উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের চল্লিশ বছর বয়সী বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ‘প্রাণটা নিয়ে বেঁচে আছি, এই তো বেশি। এমন দুঃসময়ে উৎসবের কোনো আনন্দ উপভোগের সুযোগ তো নেই। আমার ভাই মরেছে, বন্ধু মরেছে ওপারে। উৎসবের কথা আসলেই তাদের চেহারা ভেসে আসে। তাদের ফেলে ঈদের আনন্দ পাব কী করে?’ তিনি বলেন, ‘এরপরও এটা আমাদের মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব। রোজার মাসে রোজা রেখে ঈদের উৎসবে শরিক হওয়া সওয়াবের কাজ। আমরা উৎসব করব-কিন্তু বুকের ভেতর থাকবে হাহাকার।’ একই শিবিরের ডি ব্লকের মোহাম্মদ রফিক নামের ১৫ বছরের কিশোর জানিয়েছে, মিয়ানমারের নাগাকুরা এলাকার নাইস্যাপুরে তাদের বাড়ি। প্রতিবছর ঈদে বন্ধু-বান্ধবকে নিয়ে অনেক আনন্দ করত সে।
পুরো রমজান মাস সারা দিন রোজা রেখে বাসায় মজা করে ইফতারের আয়োজন চলত। তারাবির নামাজের আগে মসজিদের সামনে বসত তুমুল আড্ডা। ঈদের সময় এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে মাঠের ধারে আর নদীর পাড়ে বেড়াতে যেত। কিন্তু এখন কারও বাড়ি নেই। মাঠ নেই, নদীও নেই। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে পরিবারসহ। তার বন্ধু-বান্ধব কে কোথায় রয়েছে জানে না রফিক। রফিক বলে, নতুন জামা কিনে দেবে- এ সাধ্য তো বাবার নেই। বাড়িতে থাকলে আত্মীয় স্বজন থেকে উপহার পেতাম। এখন কে কাকে উপহার দেবে? দেখতেই তো পাচ্ছেন আমরা কী অবস্থায় আছি।
গত বছরের ২৪ আগস্ট মিয়ানমার সেনা ছাউনিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন আরসার হামলার পর ভয়ঙ্কর নিপীড়ন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়ে বাংলাদেশে নতুন করে পালিয়ে আসে সাড়ে আট লাখের মতো রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু। টেকনাফ ও উখিয়ার বেশ কয়েকটি ক্যাম্পে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নতুন পুরাতন মিলে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা। এসব সংস্থার ত্রাণের ওপর নির্ভর করেই চলতে হয় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের। ক্যাম্পে থাকার ফলে তারা বাইরে কোথাও কাজও করতে যেতে পারেন না। ফলে বাড়তি কোনো টাকাও তাদের হাতে নেই।
রোহিঙ্গা নেতা রাকিব উল্লাহ জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সরকার ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী, ইফতার সেহেরির খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করেছে। পোশাকসহ শিশুদের নানা প্রকার খেলনা, কাপড় সরবরাহ করছে। এরপরও রোহিঙ্গাদের মাঝে ঈদ আনন্দ নেই। ওই রোহিঙ্গা নেতা বলেন, পরবাস জীবনে ঈদ আনন্দ যতই মধুর হোক না কেন নিজ মাতৃভূমির স্বাদ কেউ পাবে না। তাই রোহিঙ্গাদের মাঝে ঈদুল ফিতরের আনন্দ নেই বললে চলে।
পাঠকের মতামত: